ঢাকা, ২০২৪-০৪-৩০ | ১৬ বৈশাখ,  ১৪৩১

মুশতাকই প্রথম লেগস্পিনার, যিনি হলেন বাংলাদেশের স্পিন কোচ

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ০১:১৩, ১৮ এপ্রিল ২০২৪  

দু’একটি বিচ্ছিন্ন সিরিজ বা টুর্নামেন্ট বাদ দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলে কখনোই (হালে রিশাদ হোসেন ছাড়া) কোন স্পেশালিস্ট লেগস্পিনার ছিল না। দলে বেশিরভাগ সময় বাঁ-হাতি অর্থোডক্স স্পিনারদের আধিক্য। তাই বেশিরভাগ সময় সাবেক বাঁ-হাতি স্পিনাররাই বাংলাদেশের স্পিন কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভারতের সুনিল জোসি, নিউজিল্যান্ডের ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, শ্রীলঙ্কার রঙ্গনা হেরাথের পাশাপাশি পাকিস্তানের বিশ্বনন্দিত অফস্পিনার সাকলাইন মুশতাক এবং শ্রীলঙ্কার সাবেক অফব্রেক বোলার রোয়ান কালপাগেও টাইগারদের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু এবার সে ধারার ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে বিসিবি। প্রথমবারের মত একজন স্পিন কোচ নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যিনি বাঁ-হাতি স্পিনারও নন, অফস্পিনারও নন। ইতিহাস জানাচ্ছে, পাকিস্তানের মুশতাক আহমেদই বাংলাদেশের প্রথম স্পিন কোচ, যিনি একজন লেগস্পিনার। তবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে টাইগারদের সাথে আগে কখনোই কোনো লেগস্পিনার কাজ করেননি, এমন নয়। করেছেন। তবে সেটা খন্ডকালীন এবং একটি নির্দিষ্ট আসরে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের স্পিনারদের সাথে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করেছেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মুশতাক মোহাম্মদ। বলে রাখা ভাল, পাকিস্তান ক্রিকেট তথা বিশ্বনন্দিত হানিফ মোহাম্মদ ও সাদিক মোহাম্মদের আপন ভাই মুশতাক মোহাম্মদ ৭০ দশকের তুখোড় অলরাউন্ডার, যিনি একাধারে প্রতিভাবান ব্যাটার ও খুবই কোয়ালিটি লেগস্পিন গুগলি বোলার হিসেবে সমাদৃত ছিলেন। তিনি ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের আগে টিম বাংলাদেশের স্পিন কনসালটেন্ট হিসেবে ইংল্যান্ডে কাজ করেছেন। কিন্তু অনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্পিন কোচ হয়ে আগে কখনো কোন লেগি কাজ করতে আসেনি। কেন এবার লেগি মুশতাক হলেন সাকিব, মিরাজ, তাইজুল, শেখ মেহদিদের কোচ? সে প্রশ্ন অনেকের মনেই। তবে কি এবার লেগস্পিনারদের মান উন্নত করতেই মুশতাককে স্পিন কোচ করে আনা হয়েছে? এটা ভাবার কোনো মানে নেই যে, লেগ স্পিনার ছিলেন বলেই মুশতাক দক্ষ স্পিন বোলিং কোচ নন। বরং ক্রিকেট বিশ্ব তাকে একজন হাই কোয়ালিটি লেগব্রেক গুগলি বোলারের পাশাপাশি দারুন স্পিন কোচ হিসেবেও চেনে, জানে। একটা সময় মুশতাক বিশ্বের সেরা তিন রিস্ট স্পিনারের একজন ছিলেন। বিজ্ঞাপন ১৯৯২ সালে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ বিজয়ী দলের অন্যতম সদস্যও তিনি। ৫২ টেস্টে ১৮৫ উইকেট আর ১৪৪টি একদিনের খেলায় ১৬১ উইকেট শিকারী মুশতাকের পরিসংখ্যান তার মেধা ও প্রজ্ঞার প্রকৃত নির্দেশক নয়। তিনি আব্দুল কাদিরের পর পাকিস্তানের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা লেগ ব্রেক গুগলি বোলার হিসেবে সমাদৃত। দেশের ভেতর ও বাইরে সাফল্যের চেয়ে ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে লেগি মুশতাকের সাফল্য অনেক নজরকাড়া। পাকিস্তান জাতীয় দলে জায়গা হারানোর পর মুশতাক পুরোদমে কাউন্টি ক্রিকেটে মনোযোগী হয়ে পড়েছিলেন। ২০০২ সালে সারের হয়ে প্রথম ইংলিশ কাউন্টি খেলেন; কিন্তু মোটেও সুবিধা করতে পারেননি। পুরো লিগে মাত্র ৮ উইকেট ছিল তার নামের পাশে। পরের বছর দল পাল্টে মুশতাক আহমেদ যোগ দেন সাসেক্সে। সেখানেই কাটে ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেটে তার সেরা সময়। একটানা ৫ বছর সাসেক্সের হয়ে কাউন্টির অন্যতম শীর্ষ উইকেট শিকারী ছিলেন এ পাকিস্তানী লেগস্পিনার। তার হাত ধরে ইংলিশ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নও হয় সাসেক্স। কাউন্টি ক্রিকেটে মুশতাকের দারুন ফর্ম দেখে পাকিস্তান ক্রিকেটবোর্ড আবার তাকে দলে টানে; কিন্তু সেটাও ছিল স্বল্প সময়ের জন্য। এরপর আবার সাসেক্সে ফিরে এসে আরও ২ বার দলকে ট্রফি জেতান এ পাকিস্তানী লেগস্পিনার। সাসেক্সের পক্ষে ইংলিশ কাউন্টিতে ৮৫টি ম্যাচ খেলে ৪৭৮ উইকেট শিকারী মুশতাক। এমন দুর্দান্ত বোলিং কীর্তির পর তাকে স্পিন কোচ হিসেবে পেতে আগ্রহী হয় ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি)। এ পাকিস্তানীকে ২০০৮ সালের শেষের দিকে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের প্রধান স্পিন কোচ পদে নিয়োগ দেয়। একটানা ৬ বছর (২০১৪ পর্যন্ত) এই দায়িত্বে বহাল ছিলেন মুশতাক। এরপর তিনি সারের স্পিন কোচ, পাকিস্তান জাতীয় দলের স্পিন কোচের দায়িত্ব পালন করেন। গত এক যুগে পাকিস্তানের স্পিন উপদেষ্টা হিসেবে বেশ কয়েকবারই কাজ করেছেন মুশতাক আহমেদ। এছাড়া আইপিএলের ২০১৩ সালের আসরে দিল্লী ডেয়ার ডেভিলসের স্পিন কোচের ভূমিকায়ও দেখা যায় মুশতাককে। বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
জনপ্রিয়