ঢাকা, ২০২৪-০৫-১৮ | ৪ জ্যৈষ্ঠ,  ১৪৩১

ন্যাপ এক্সপো থেকে কী পেল বাংলাদেশ?

প্রবাস নিউজ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ২৩:৫১, ৪ মে ২০২৪  

তবে দেশে প্রথমবারের মতো হওয়া জাতিসংঘের এমন আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলন যতটা গোছালো ও ফলপ্রসূ হওয়ার কথা ছিল তা হয়নি বলে অভিযোগ করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। অনেকেই দাবি করেন, জলবায়ুবিষয়ক জাতিসংঘের এত বড় পরিসরের সম্মেলন যেভাবে পরিচালনা হওয়ার কথা ছিল সেভাবে করতে পারেনি বাংলাদেশ। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনেই জার্মানিতে পাড়ি জমান পরিবেশমন্ত্রী। এতে অনেকটাই হালকা হয়ে পড়ে ন্যাপ সম্মেলন। তবে তার অবর্তমানে পরিবেশ সচিব ফারহিনা আহম্মেদের নেতৃত্বে শেষ হয় ন্যাপ এক্সপো।

এদিকে সম্মেলন কিছুটা অগোছালো হলেও কারো কারো মতে, প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে এত বড় পরিসরের একটি সম্মেলন যে বাংলাদেশ করতে পেরেছে এটিই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের জন্য অনেক বড় বিষয়। এতে প্রশ্ন ওঠে: ন্যাপ এক্সপো থেকে বাংলাদেশ আসলে কী পেল?

ন্যাপ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক রেজিলিয়েন্স প্রোগ্রামের কো-অর্ডিনেটর ডেভিড হফম্যানকে ন্যাপ এক্সপো থেকে কী পেল বাংলাদেশ এমন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি সময় সংবাদকে বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (আইআইএসডি) অধীন আমরা ১০ বছর ধরে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা তৈরি ও বাস্তবায়নে সাহায্য করে আসছি। এর জন্য সরকারগুলোকে প্রযুক্তিগত সহায়তাও করি আমরা। বাংলাদেশ এটি আয়োজন করায় বিভিন্ন দেশের সরকারের মধ্যে জলবায়ু অভিযোজনের চ্যালেঞ্জ ও অভিযোজন নিয়ে আলোচনার একটি সুযোগ তৈরি হয়। এতে একে অন্যের সঙ্গে জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরাও বাংলাদেশের পরিকল্পনা জানতে পেরেছি।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় অভিযোজন পরিকল্পনা সাজিয়েছে, যা তারা বিশ্বের অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিদের জানাতে পেরেছে। এতে উন্নত দেশগুলো যে ক্ষতিপূরণ ও অভিযোজন তহবিল দেয়ার কথা সেটি প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে। তা ছাড়া নেটওয়ার্কিংয়ের বাহিরে অন্যান্য দেশ এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করছে, তা-ও জানতে পেরেছে বাংলাদেশ।
ডেভিড হফম্যান বলেন, ‘একেক দেশের চ্যালেঞ্জ একেক রকম, মোকাবিলার পদ্ধতিও ভিন্ন। নিজেদের মধ্যে এসব জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে শুধু বাংলাদেশ নয়, সবাই লাভবান হয়েছে। যেমন: বাংলাদেশ ছাদবাগান করে পরিবেশ বিপর্যয় মোকাবিলার চেষ্টা করছে, যা অনেকেই জানে না। এভাবে অন্য দেশের অভিযোজন পরিকল্পনা থেকেও বাংলাদেশ নতুন কিছু শিখতে পেরেছ বলে আমি মনে করি।’

এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলস্বরূপ বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে যেখানে এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করতে হতো, সেই মরুর বুকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতে বন্যা আর সবুজের চিত্র ফুটে উঠেছে। অপরদিকে বছরের অধিকাংশ সময় ঠান্ডা থাকা ইউরোপে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। বাংলাদেশও কয়েক দিন ধরে তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে। প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মানুষ।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখনই কমানো না গেলে খুব দ্রুতই বিশ্বকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে। তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। চলতি মাসে টানা ১০-১৫ দিনের মতো তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এ সময়ে ৫০ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে যশোরে ৪৩.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। আর এ সময়েই জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবিলায় জলবায়ু অভিযোজন নিয়েই ঢাকায় হয় ন্যাপ এক্সপো।

ন্যাপ এক্সপো হলো, একটি আন্তর্জাতিক ফোরাম, যেখানে বিভিন্ন দেশ, সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডাররা ন্যাপ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারস্পরিক যোগাযোগ এবং অভিজ্ঞতা বিনিময় করে। বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা, সর্বোত্তম অনুশীলন, বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ, চাহিদা এবং ন্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে আলোচনার জন্য বিশেষজ্ঞদের বৈঠক হয় এই সম্মেলনে। পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতির মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হয়।
 

সম্মেলনের ‘অ্যাডভান্সমেন্ট অব ন্যাশনাল ক্লাইমেট প্ল্যানস অব বাংলাদেশ’ সেশনে বাংলাদেশের জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা থেকে জলবায়ু সহিষ্ণু অবস্থার দিকে উত্তরণের জন্য ২০০৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড’ প্রতিষ্ঠা করে। নিজস্ব সম্পদ থেকে এই তহবিলে এই পর্যন্ত ৪৯০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে বাংলাদেশ। সরকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ ব্যয় করছে জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলা ও অভিযোজন প্রস্তুতিতে।
 

জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনায় ১১টি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে ১১৩টি অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রম চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০৫০ সাল পর্যন্ত সময়ে ন্যাপে গৃহীত কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে, যা নিয়ে কাজ করছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন্স অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (ইউএনএফসিসিসি)-এর ব্যবস্থাপনায় জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনাসমূহের ওপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট দেশের সব উন্নয়ন পরিকল্পনা এগিয়ে নেয়ার জন্য ২০১৩ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ন্যাপ এক্সপোর আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম সফল দেশ হিসেবে, তথা রিজিলিয়েন্ট কান্ট্রি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সেই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতিসংঘ জলবায়ু অভিযোজন সম্মেলন ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪ আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছি আমরা।’

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি বাংলাদেশ। দেশের উপকূলীয় অঞ্চল বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগরের সীমানায়। লবণাক্ততার প্রভাব পড়েছে সুপেয় পানি, কৃষি, যোগাযোগ ও অভিবাসনে। বন্যা, তীব্র তাপপ্রবাহ, অনাবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবেও ব্যাহত হচ্ছে অগ্রযাত্রা। বৈশ্বিক উষ্ণতাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবগুলোর পেছনে দায় কম হলেও এগুলোর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে বাংলাদেশকেই। তাই এ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি বিশ্বের কাছে তুলে ধরছি। আমাদের পরিকল্পনাগুলোও অন্যান্য দেশের সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বাংলাদেশের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেই বার্তা আমরা স্পষ্টভাবে দিয়েছি। কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘এ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর অভিযোজনের জন্য যে বিপুল অর্থ প্রয়োজন, ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান (ন্যাপ) এক্সপো ২০২৪ আয়োজনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সেই অর্থের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বই তুলে ধরা হলো আন্তর্জাতিক মহলের কাছে। বিশ্বের ১০৪টি দেশের অংশগ্রহণে এই এক্সপোতে বাংলাদেশ তুলে ধরেছে নিজেদের সক্ষমতা, শক্তি ও পরিকল্পনা। বাংলাদেশ আশা করছে, আগামী কপ (কপ-২৯) সম্মেলনে এসব বিষয়ই অগ্রাধিকার পাবে এবং সামনের কপ সম্মেলন হবে অর্থনৈতিক সম্মেলন। সেখান থেকে যদি অর্থ সহায়তা নিশ্চিত করা না যায়, তাহলে আর সেই অর্থ পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থেকে যাবে। তাই আমরা এই এক্সপো আয়োজনের মাধ্যমে সেই প্ল্যানটাই বাস্তবায়নে কাজ করছি।’

এ বিষয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ন্যাপ এক্সপোতে জাতীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে রূপান্তরমূলক অভিযোজন নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অভিযোজন পরিকল্পনার জন্য একটি নতুন পদ্ধতির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে এবং বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আলোচনা করা হয়েছে। এক্সপো অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেয়ার একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে। সামগ্রিকভাবে ইভেন্টটি অভিযোজন পরিকল্পনায় বাংলাদেশের নেতৃত্বশীল ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কার্যকর কৌশল সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে।

জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সম্পদ ও প্রযুক্তি প্রদানের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে পরিবেশ সচিব বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে, বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে (এলডিসি) বাস্তব সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিতে হবে, যেখানে ন্যাপ বাস্তবায়নের জন্য অর্থের অ্যাকসেস এখনও চ্যালেঞ্জিং। তাই ন্যাপের অগ্রগতি মূল্যায়ন ও এগিয়ে যাওয়ার কৌশল নির্ধারণ করে সেভাবে কাজ করতে হবে। উন্নত দেশগুলোকে অর্থ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এমনকি এই এক্সপোর ফলাফলকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কপ ২৯-এ একটি ইভেন্ট আয়োজন করা যায় কি না, সেটিও ভাবতে হবে।

জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন সচিবালয়ের অভিযোজন বিভাগের ব্যবস্থাপক ডা. পল ডেসাঙ্কার ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও বাংলাদেশ জলবায়ু উন্নয়ন অংশীদারিত্বের মতো উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে জলবায়ু পরিবর্তনের মধ্যে বাংলাদেশের স্থিতিস্থাপকতার প্রশংসা করেন। উদ্ভাবনী অর্থায়ন ও আন্তঃসীমান্ত সহযোগিতার আহ্বানসহ ন্যাপ বাস্তবায়নে আর্থিক সীমাবদ্ধতার মতো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যার সাফল্যের জন্য সরকারি, বেসরকারি অংশীজন ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা অত্যাবশ্যক এবং সবার একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন তিনি।
এই সম্মেলনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংগঠন ইউএনএইচসিআরের ক্লাইমেট অ্যাকশন টিমের মিশেল ইউনেতানিও অংশ নেন। এক্সপো নিয়ে মুগ্ধতা জানিয়ে তিনি বলেন, এখানে একই ছাদের নিচে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের মধ্যে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছে। এটি সত্যিই মূল্যবান।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে সাহায্য দিতে ২০১৪ সালে ন্যাপ গ্লোবাল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এরই আওতায় ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান (জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা) গ্রহণ করে। এতে ২০২৩-৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ৫৩৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ৩৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যয় করে, বাকি টাকা প্রয়োজন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে। চার দিনের ন্যাপ এক্সপোর মাধ্যমে সেটির যৌক্তিকতাই তুলে ধরা হয়।

সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) নির্বাহী পরিচালক মালিক ফিদা এ খান সময় সংবাদকে বলেন, ন্যাপ এক্সপোর উদ্দেশ্য ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডের যৌক্তিকতা তুলে ধরা, যা আমরা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছি। ২০১৩ সাল থেকে ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা ও ডেভেলপমেন্ট পার্টনারদের কাছ থেকে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য এটিই সবচেয়ে ভালো প্ল্যাটফর্ম ছিল বলে আমি মনে করি।
 

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ২০২৩ থেকে ২০৫০ সালের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলার চায়। আটটি সেক্টরে ১১৩টির মতো ইন্টারভেনশন খুঁজে বের করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে এটি ঠিক করা হয়েছে। এর আগে টাকা চাওয়ার জন্য আমাদের হাতে কোনো ডকুমেন্টস ছিল না। এখন ন্যাপের মাধ্যমে আমাদের হাতে একটি বেজ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ এরই মধ্যে ২৫টি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ খাতে ৩৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে। বাকি টাকা আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে চাইছি।

পরিকল্পনা সম্পর্কে ফিদা এ খান বলেন, এতদিন যত পরিকল্পনা হয়েছে তার সব কটিই পাবলিক সেক্টরকে প্রাধান্য দিয়ে। আমরা ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যানে প্রাইভেট সেক্টরকে উৎসাহ দিয়েছি। পিপিপির আন্ডারে হোক বা অ্যাডাপ্টেশনের কোন কোন এলাকায় তারা ইনভেস্ট করতে পারে, সেটি নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে। আমরা দেখেছি প্রায় ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২ বিলিয়ন ডলারের মতো এই অ্যাডাপ্টেশন ফান্ডে প্রাইভেট সেক্টর আসতে পারে। কোন কোন সেক্টরে তারা কাজ করতে পারে সেটি ঠিক করতে আমরা একটি বিজনেস মডেল তৈরি করেছি। প্রাইভেট সেক্টরকে লাভবান করার চিন্তা করেই আমরা তাদের যুক্ত করার কথা বলছি।

তিনি বলেন, জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলায় একদিকে যেমন প্রয়োজন দ্রুত পদক্ষেপ, তেমনি অভিযোজনের জন্য দরকার অর্থায়ন। যে পরিমাণ অর্থায়ন আমরা এতদিন পেয়ে আসছি, তা চাহিদার তুলনায় কিছুই না। এই আয়োজনের মাধ্যমে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এই বার্তাটিও আমরা স্পষ্ট করতে চেয়েছি। সব মিলিয়ে জলবায়ু অভিযোজনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বদরবারে একটি শক্ত অবস্থানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

এদিকে চার দিনের এই এক্সপোতে ১৬টি সেশনে বিশেষজ্ঞরা ট্রান্সফরমেশনাল অ্যাডাপটেশন, ফাইন্যান্সিয়াল মেকানিজম, অ্যাডাপ্টেশন অ্যাকটিভিটি মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন টুলস, জেন্ডার রেসপনসিভ অ্যাডাপটেশনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করে। এবং সম্মেলনে মোট ২০টি স্টল ছিল, যেখানে বিভিন্ন দেশের অভিযোজনমূলক কর্মকাণ্ড প্রদর্শিত হয়।

এতে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ করা ১০টি স্টলে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, পাহাড়ি অঞ্চলে সোলার এনার্জির মাধ্যমে পানি তোলার ব্যবস্থা, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ, প্রাণিসম্পদ সংরক্ষণ এবং অন্যান্য কৃষি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিষয়, জলবায়ু অভিযোজনের জন্য সাইক্লোন শেল্টারসহ বিভিন্ন বিষয় প্রদর্শন করা হয়। এসব স্টলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় অংশ নেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীও অংশ নেয়। যার ফলে প্রথমবারের মতো হয়ে যাওয়া ন্যাপ এক্সপো থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি অনেক, এমনটাই মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়